ভারতের জনগণের মৌলিক অধিকার
|
ভারতের জনগণের মৌলিক অধিকার |
মৌলিক অধিকার
১. মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুকরণে ভারতীয় সংবিধানে মৌলিক অধিকার [Fundamental Rights] যুক্ত হয়েছে। ব্যক্তি জীবনের প্রয়ােজন পূরণের ক্ষেত্রে এই অধিকার | সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। এই অধিকার খর্ব হলে আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পাওয়া যায়।
২. মৌলিক অধিকার আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য। এই অধিকারগুলি আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত।
৩. ভারতীয় সংবিধানের তৃতীয় অংশে (PART-III), ১২ থেকে ৩৫ ধারায় মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে।
৪. বর্তমানে ৬টি মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। যেমন:-
- ১৪-১৮ ধারা – সাম্যের অধিকার।
- ১৯-২২ ধারা – স্বাধীনতার অধিকার।
- ২৩- ২৪ ধারা – শােষণের বিরুদ্ধে অধিকার।।
- ২৫-২৮ ধারা – ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার।
- ২৯-৩০ ধারা – সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার।।
- ৩২-৩৫ ধারা – শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার।
৫. ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ৪৪ তম সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে, ৩১ নং ধারা সম্পত্তির অধিকার বাদ দেওয়া হয়েছে।
৬. মূল সংবিধানে সাতটি মৌলিক অধিকার ছিল।
৭. মৌলিক অধিকার আইন ও শাসনবিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত এবং আদালত কর্তৃক বলবৎযােগ্য কিন্তু অন্যান্য অধিকারগুলি তা নয়।
সাম্যের অধিকার (১৪-১৮ নং ধারা) :
১. ১৪ নং ধারা :
‘আইনের কাছে সমতা’ (équality of | before law)। এর অর্থ হল সাধারণ ভাবে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে। নয়, প্রত্যেকেই আইনের অধীন এবং আইনের চোখে সমান।
২. ১৫ নং ধারা :
পৃথকাচরণ বিলােপ। সাম্যের অধিকারের এই ধারায় বলা হয়েছে ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নারী-পুরুষ বা জন্মস্থানগত কারণে রাষ্ট্র জনগণের প্রতি পৃথকাচরণ (discrimination) করবে না । সর্বসাধারণের ব্যবহার্য রেস্তোরা বা সরকারী খরচে পরিচালিত পুকুর বা কোন স্থান ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনরূপ শর্ত আরােপ করা যাবে না।
৩. ১৬ নং ধারা :
চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযােগ সুবিধা। সরকারী চাকরীতে সকল নাগরিকের সমান সুযােগের অধিকারকে স্বীকার করা। বলা হয়েছে : সাধারণভাবে ধর্ম, জাতি, বর্ণ, নারী-পুরুষ, বাসস্থান এবং জন্মস্থানের পার্থক্যগতকে বিবেচনা করা যাবে না।
৪. ১৭ নং ধারা :
অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ। গান্ধিবাদের আদর্শকে গ্রহণ করে সাম্যের এই অধিকার বলবৎ হয়েছে । অস্পৃশ্যতার কারণে উদত যেকোন রকম অক্ষমতার বলবৎ করণ আইনের চোখে দন্ডনীয় অপরাধ ।
৫. ১৮ নং ধারা :
পদবী বা খেতাব নিষিদ্ধকরণ। সরকার কর্তৃক ব্যক্তি বিশেষকে খেতাব প্রদান সাম্যনীতি বিরােধী। শিক্ষাগত যােগ্যতা বা সামরিক গুণের পরিচারক নয় এমন কোনও খেতাব। রাষ্ট কাউকে দিতে পারবে না। রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত ভারতের কোন নাগরিক বিদেশি রাষ্ট্রের কাছ থেকেও খেতাব গ্রহণ করতে পারবে না। উল্লেখ্য যে ‘ভারতরত্ন', পদ্মবিভূষণ’, ‘পদ্মভূষণ, ‘পদ্ম প্রভৃতিকে সম্মান বা পুরস্কার (Award) হিসাবে গণ্য করা হয়।
স্বাধীনতার অধিকার (১৯-২১ নং ধারা) :
ক) ১৯ নং ধারা :
- ১৯/১/A বা স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের অধিকার। ব্যক্তির সুষ্ঠু বিকাশের জন্য নিজস্ব মতামত, বিশ্বাস ও চিন্তাধারা মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে প্রকাশ করার অধিকার। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাও যুক্ত ।
- শান্তিপূর্ণভাবে সভা ও সমিতি গঠনের অধিকার,
- নিরস্ত্র সমাবেশের স্বাধীনতা,
- ভারতবর্যে যে কোন স্থানে যাওয়ার বা বসবাসের অধিকার,
- বৃত্তি ও পেশার স্বাধীনতা,
- চাকুরী গ্রহণ ও স্থায়ী হওয়ার অধিকার।
খ) ২০ নং ধারা :
কোন অপরাধের জন্য নাগরিককে আইন বহির্ভূত ও অতিরিক্ত শাস্তি প্রদান করা যাবে না।
গ) ২১ নং ধারা :
আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়া কাউকে তার জীবন ও দৈহিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
ঘ) ২২ নং ধারা :
এই ধারায় স্বেচ্ছাচারী, গ্রেপ্তার ও আটকের বিরুদ্ধে কতকগুলি অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
- গ্রেপ্তার করা হয়েছে এমন কোনও ব্যক্তিকে সত্বর তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে।
- আটক ব্যক্তিকে আইনবিদের সঙ্গে পরামর্শের সুযােগ দিতে। হবে।
- ২৪ ঘন্টার মধ্যে নিকটবর্তী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে উপস্থিত করতে হবে।
শোষনের বিরুদ্ধে অধিকার (২৩-২৪ নং ধারা) :
ক) ২৩ নং ধারা :
এই ধারায় মানুষ বেচা-কেনা, বিনা পরিশ্রমিককে বগার খাটানাে বা জোর করে কাজ করানাে নিষিদ্ধ।
খ) ২৪ নং ধারা :
এই ধারায় ১৪ বছরের কম বয়সী কোন শিশুকে কারখানা, খনি বা অন্য কোনও বিপজ্জনক কাজে নিয়ােগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (২৫-২৮ নং ধারা) :
ক) ২৫ নং ধারা
ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার প্রাকৃত হয়েছে। এই ধারায় বলা হয়েছে প্রত্যেক ব্যক্তিই বিবেকের স্বাধীনতা এবং যে কোনােও ধর্ম গ্রহমের ধর্মীয় উপাসনার ও ধমীয় প্রচায়ে। স্বাধীনতা ভােগ করবে। মূল সংবিধানে ধমনিরপেক্ষতার কথা না হলেও ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ৪২ তম সংবিধান সংশােধনী আইনে SECULAR শব্দটি প্রস্তাবনায় যুক্ত করে ভারতকে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র ঘােষণা করেছে।
খ) ২৬ নং ধারা :
প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজের ধর্মীয় সংগঠন ও কার্যাদি পরিচালনা করার অধিকার রয়েছে। স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও মালিকানার অধিকার লাভ করবে।
গ) ২৭ নং ধারা :
ধর্মীয় কারণে কোন ব্যক্তি কর দানে বাধ্য নয়।
ঘ) ২৮ নং ধারা :
এই ধারা অনুযায়ী সম্পূর্ণভাবে সরকারী অর্থে পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবেনা। ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি তাদের ইচ্ছাধীন। সরকার দ্বারা পরিচালিত ট্রাস্ট ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারে।
সংস্কৃতি ও শিক্ষার অধিকার (২৯-৩০ নং ধারা) :
ক) ২৯ নং ধারা :
ভারতের যে কোন অংশের নাগরিকগণ। নিজস্ব সংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে পারবে। সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ভারতীয় সমান সুযােগ লাভ করবে। কাউকে শিক্ষার সুযােগ থেকে বঞিত করা যাবে না।
খ) ৩০ নং ধারা :
সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করার অধিকার। পৃথকধর্ম ও ভাষার ভিত্তিতে কোন সম্প্রদায়কে আর্থিক অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কোন রকম বৈষম্য করবে না।
শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার (৩২-৩৫ নং ধারা) :
ক) ৩২ নং ধারা :
মৌলিক অধিকার থেকে যদি কেউ বঞ্চিত হয় তাহলে সে কোর্টে তার প্রতিবিধান দাবি করতে পারে। ব্রিটিশ ও মার্কিন ব্যবস্থার অনুকরণে সুপ্রিম কোর্ট বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ| (Harbeas), পরমাদেশ (Mandamus), প্রতিষেধ (Prohibition), উৎপ্রেষণ (certiorari), অধিকার পৃচ্ছা (Quo Warrarto) ইত্যাদি লেখ জারি করতে পারে।
খ) ৩৩ নং ধারা :
ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর মৌলিক অধিকারসমূহ পার্লামেন্ট (আইসসভা) আইন প্রণয়নের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
গ) ৩৪ নং ধারা :
দেশের কোন অঞ্চলে সামরিক আইন বলবৎ থাকাকালীন সময়ে উক্ত অঞলে মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হতে| পারে।
ঘ) ৩৫ নং ধারা :
মৌলিক অধিকারসমূহ রক্ষার্থে প্রয়ােজনীয় আইন প্রণয়ন।