ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্টসমূহ
|
ভারতীয় সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্টসমূহ |
১. পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। বর্তমানে ১২টি তফশিল(Schedule), ২২টি অংশ(Part) ও ৪৫০টির বেশি ধারা(Article) রয়েছে।
২. সংবিধানে শুরুতেই একটি প্রস্তাবনা যুক্ত রয়েছে। প্রস্তাবনাকে সংবিধানের ‘মুখবন্ধ’ (Preface) বলা হয়।
৩. সংবিধানে ৬টি মৌলিক অধিকারের উল্লেখ আছে।
৪. সংবিধানে ১৭টি নির্দেশমূলক নীতির উল্লেখ আছে।
৫. সংবিধানে ১১টি নাগরিক কর্তব্যর উল্লেখ আছে।
৬. ভারতের সংবিধান একদিকে সুপরিবর্তনীয়, অপরদিকে দুষ্পরিবর্তনীয়ও।
- অপরদিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, সংবিধান সংশােধন প্রভৃতি ক্ষেত্রে দুম্পরিবর্তনীয়।
- সাধারণ পদ্ধতির দ্বারা সংবিধানের কোন অংশের পরিবর্তনকে সুপরিবর্তনীয় বলে।
- জটিল’ ও ‘বিশেষ পদ্ধতির দ্বারা সংবিধানের অংশের পরিবর্তনকে দুম্পরিবর্তনীয় বলে।
৭. স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার ব্যবস্থা।
৮. প্রকৃতিতে ভারতীয় সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয়, কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রবণতার লক্ষণ খুব বেশি।
- কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি ২৯টির বেশি রাজ্য সরকার রয়েছে।
- সংবিধানের মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে ক্ষমতা বন্টন।
৯. আধা যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও গৃহীত। যেমন - রাজ্যের নিজস্ব সংবিধান না থাকা (ব্যতিক্রম জম্মু-কাশ্মীর) রাজ্যের সুপ্রীম কোর্টের অনুপস্থিতি। রাজ্যপালকে ‘স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রদান। এক নাগরিকত্বের নীতি গ্রহণ প্রভৃতি।
১০. প্রাপ্ত বয়স্ক (বর্তমানে ১৮ বছর) ভােটাধিকার স্বীকৃত। সংবিধানের ৩২৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে ভােটদানের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
- ৬১ তম সংবিধান সংশােধনের মাধ্যমে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ভােটদানের ন্যূনতম বয়স ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়।
১১. সংবিধানে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। রাষ্ট্র কোন বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপােষকতা বা বিরােধিতা করবে না ।
১২. সম পর্যায়ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সাম্য।
- ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নং ধারায় আইনের চোখে সমান বলা হয়েছে।
- আবার সমপর্যায়ভুক্ত প্রতিটি নাগরিক রাষ্ট্রকর্তৃক সমান আচরণ পাবেন।
- প্রতিটি নাগরিক জাতি, ধর্ম, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে রাষ্ট্র কর্তৃক সমান আচরণ পাবে।
১৩. সংসদীয় শাসনব্যবস্থার প্রাধান্য। ব্রিটিশ সংবিধান অনুকরণে ভারতীয় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। প্রকৃত শাসন (প্রধানমন্ত্রী) ও নিয়মতান্ত্রিক শাসক (রাষ্ট্রপতি)- এই দুই প্রকাশ শাসক প্রধানের উপস্থিতি। আইনসভা (কেন্দ্রীয়) উচ্চকক্ষ (রাজ্যসভা) ও নিম্নকক্ষ (লােকসভা) নিয়ে উঠিত। প্রধানমন্ত্রী সহ কেন্দ্রিয় মন্ত্রিপরিষদ লােকসভার নিকট দায়িত্বশীল থাকেন। সাংবিধানিক প্রধান রাষ্ট্রপতি পরােক্ষভাবে জনগণ দ্বারা নির্বাচিত। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীসভা জনগণ দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী সহ যত সরকারী পদ রয়েছে কোনটিই বংশগত সূত্রে অর্জন করা যায় না। রাজ্যের ক্ষেত্রেও তাই।
১৪. গণতান্ত্রিক ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করার জন্য স্থানীয় স্বায়তশাসন ব্যবস্থা সংযােজিত হয়েছে। শহরের ক্ষেত্রে পৌরসভা ও গ্রামের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা রয়েছে।
১৫. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে বিরােধী দলের যথাযথ ভূমিকার ওপর। কেন্দ্রীয় আইনসভা থেকে শুরু করে স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন পর্যন্ত বিরােধী দলের ভূমিকা অনন্য। ভারত রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় আইনসভা (পার্লামেন্ট) ও রাজ্য আইনসভা (বিধানসভা)-য় বিরােধী দলের মর্যাদা পেতে হলে সংশ্লিষ্ট দলকে মােট আসনের ১/১০, অংশ লাভ করতে হবে। সংবিধান স্বীকৃত বিরােধী দলের প্রথম মর্যাদা পায় ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।
১৬, ভারতীয় সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে তিনপ্রকার জরুরী অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা (Emergency Power) প্রদান করেছে।
- জাতীয় জরুরী (৩৫২ নং ধারা)
- শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার জন্য জরুরী (৩৫৬ নং ধারা) ও(৩৬৫ নং ধারা)
- আর্থিক জরুরী (৩৬০ নং ধারা) সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে।
১৭. ভারতীয় সংবিধানে তফশিলি জাতি-উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর ভারতীয় সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের জন্য সুযােগ-সুবিধা রয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনসভা ও রাজ্য আইনসভা প্রভৃতিতে আসন সংরক্ষণের
ব্যবস্থা রয়েছে।
১৮. ভারতীয় সংবিধানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেন্দ্র তালিকা, রাজ্য তালিকা ও যুগ্ম তালিকার মাধ্যমে ক্ষমতার বন্টন হয়েছে।
১৯. বর্তমানে ৯৯টি বিষয় কেন্দ্রতালিকা, ৬১টি বিষয়। রাজ্যতালিকা এবং ৫২টি বিষয় যুগ্ম তালিকা ভুক্ত।।
২০. সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের এক-নাগরিকত্ব স্বীকৃত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতাে ভারতে দ্বি-নাগরিকত্বের (কেন্দ্রীয় ও প্রদেশ) অস্তিত্ব নেই।
বারটি (১২টি) তফশিলের (Schedule) বিষয়বস্তু:
১ম তফশিল :
ভারতবর্ষের অঙ্গরাজ্যসমূহ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞলের এলাকা ও তাদের গঠন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টগুলির বিচারপতি ও হিসাব পরীক্ষক প্রভৃতি উচ্চপদাধিকারীগণের বেতন সম্পর্কিত বিষয়।
৩য় তফশিল :
সরকারী অফিসে শপথ গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়।
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় অঙ্গরাজ্যের ও কেন্দ্রশাসিত অঞলের আসন বন্টনের বিষয়াদি।
৫ম তফশিল :
তফশিলিভুক্ত এলাকার প্রশাসন।
আসাম, মেঘালয় ও মিজোরাম | রাজ্যগুলিতে উপজাতিভুক্ত অঞলের প্রশাসনিক বিষয়।
তিনটি তালিকা (কেন্দ্র, রাজ্য ও যুগ্ম)। মাধ্যমে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির মধ্যে ক্ষমতার বন্টন।
২২টি আঞ্চলিক ভাষার স্বীকৃতি।
৯ম তফশিল :
ভূমি সংস্কার সম্পর্কিত বিষয়।
১০ম তফশিল :
দলত্যাগ বিরােধী আইন সংক্রান্ত বিষয়।
পায়েতব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়।
দ্বাদশ তফশিল :
পৌরব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়।