বিধানসভা ও বিধানসভা পরিষদের কার্যপ্রণালী
বিধানসভা ও বিধানসভা পরিষদের কার্যপ্রণালী - Procedures of the Legislative Assembly and the Legislative Assembly |
ভারতীয় সংবিধানের ১৬৮ নং ধারা অনুযায়ী রাজ্যের আইনসভা একটি বা দুটি কক্ষ থাকতে পারে। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট (বিধানসভা ও বিধানপরিষদ) ছিল। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে আইনসভা এক কক্ষ বিশিষ্ট অর্থাৎ শুধু বিধানসভা রয়েছে।
ত্রিপুরা আইনসভাও এক কক্ষ বিশিষ্ট। বিধানসভা নিম্নকক্ষ এবং বিধানপরিষদ উচ্চকক্ষ। বর্তমানে ২৯টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে অন্ত্রপ্রদেশ (সীমা), বিহার, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা এবং জম্মু-কাশ্মীরের আইনসভা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট।
এককক্ষ বিশিষ্ট অর্থাৎ শুধুমাত্র বিধানসভার অস্তিত্ব থাকবে বাকী রাজ্যগুলিতে। সংবিধানের ১৭০ নং ধারানুযায়ী রাজ্য বিধানসভা অনধিক ৫০০ জন এবং সর্বনিম্ন ৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার নির্বাচিত সদস্য সংখ্যা ২৯৪ জন। সংবিধানের ৩৩৩ নং ধারা অনুযায়ী, রাজ্যপাল প্রয়ােজনে একজন অ্যালাে-ইন্ডিয়ান সদস্যকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় মনােনীত করতে পারেন। ত্রিপুরা বিধানসভা ৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সদস্য ৪০০ জনকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা গঠিত।
বিধানসভার সদস্য হওয়ার জন্য যে যােগ্যতাগুলি প্রয়োজন হয় :
১) প্রার্থীকে ভারতীয় নাগরিক হতে হবে। ২) প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ভােটার হতে হবে। ৩) ন্যূনতম ২৫ বছর বয়স হতে হবে। ৪) কোন সরকারী চাকুরি বা লাভজনক পদে থাকা চলবে না। ৫) একাধিক রাজ্য আইনসভার সদস্য থাকা যাবে না। ৬) একই সঙ্গে সাংসদ ও বিধায়ক থাকা যাবে না। ৭) আদালত কর্তৃক বিধিনিষেধ প্রভৃতি।
রাজ্য বিধানসভার কার্যাবলী :
বছরে অন্ততপক্ষে দু’বার বিধানসভার অধিবেশন ডাকতে হবে। অধিবেশন শুরু হবে রাজ্যপালের ভাষণের মধ্য দিয়ে। দুটি অধিবেশনের মধ্যে ছয় মাসের কম ব্যবধান থাকতে হবে। বিধানসভার মােট সদস্য সংখ্যার দশ ভাগের একভাগ সদস্য উপস্থিত থাকলেই বিধানসভার গণপূর্তি l(Quorum) হয়।
সভার কাজ পরিচালনার জন্য বিধানসভার সদস্যদের মধ্যে অধ্যক্ষ বা স্পীকার এবং উপাধ্যক্ষ বা ডেপুটি স্পীকার নির্বাচন করা হয়। স্পীকার সাধারণত ভােট দেন না, তবে ভােট সংখ্যা সমান (Tie) হলে তিনি নির্ণায়ক ভােট (Casting) দেন।
বিধানসভার প্রধান কাজ হল আইন প্রণয়ন করা। রাজ্য তালিকাভুক্ত ও যুগ্ম তালিকাভুক্ত বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। বিধানসভা কর্তৃক গৃহীত কোন আইনের সঙ্গে সংবিধানে অসামঞ্জস্য দেখা দিলে ওই আইন অবৈধ হয়ে যাবে। রাজ্যের আয় ও ব্যয় মঞ্জুর করা, নতুন কর আরােপ করা বা সংশােধন করা ইত্যাদি কাজ বিধানসভার।
রাজ্যপালের সুপারিশ ছাড়া বিধানসভার কাছে ব্যয়-বরাদ্দের দাবী উত্থাপন করা যায় না। শুধুমাত্র অর্থমন্ত্রী বা মন্ত্রীসভার সদস্যরা বাজেট, অর্থবিল, করধার্য ইত্যাদি প্রস্তাব বিধানসভায় উত্থাপন করতে পারেন। মন্ত্রীসভাকে নিয়ন্ত্রণ করা বিধানসভার প্রধান দায়িত্ব। মন্ত্রিরা যৌথভাবে বিধানসভার কাছে দায়ী থাকেন। বিধানসভায় অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করে বা সরকারি প্রস্তাবকে পরাজিত করে মন্ত্রীসভাকে পদত্যাগে বাধ্য করা যায়। বিধানসভা হল রাজ্যের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণ সংস্থা।
রাজ্য প্রশাসন :
মুখ্যমন্ত্রী হলেন রাজ্যের প্রধান বাস্তব রাজনৈতিক প্রশাসক। রাজ্য রাজনীতি ও রাজ্য প্রশাসনের প্রধান নায়ক হলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে প্রশাসন পরিচালনায় সাহায্য করেন মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়। অনেকগুলি মন্ত্রক (Ministry) নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রশাসন গঠিত হয়। যেমন অর্থমন্ত্রক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, শিল্পমন্ত্রক, উচ্চশিক্ষামন্ত্রক প্রভৃতি।
প্রতিটি মন্ত্রকের নেতৃত্ব দেন একজন করে মন্ত্রী। একটি মন্ত্রকের অধীনে একাধিক বিভাগ থাকতে পারে। রাজ্য প্রশাসনের সিংহভাগ গঠিত হয় অরাজনৈতিক পেশাগত প্রশাসকদের নিয়ে। রাজ্য প্রশাসনে একজন করে মুখ্যসচিব থাকেন।
মুখ্যসচিব পেশাগত প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদাধিকারী। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে কাজ করেন। রাজ্য সরকারের সকল মন্ত্রকের ওপর তার ক্ষমতা। ব্যপ্ত। মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান পরিমর্শদাতা হলেন মুখ্যসচিব। তিনি রাজ্য ক্যাবিনেটের সচিব হিসাবেও কাজ করেন। রাজ্য সরকারের যাবতীয় নির্দেশ মুখ্যসচিবের মাধ্যমে বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভাগে পাঠানাে হয়।