আধার কার্ড লাগু করার কারণ ও তার ইতিহাস । Reasons for applying Aadhaar card and its history

আধার কার্ড লাগু করার কারণ ও তার ইতিহাস । Reasons for applying Aadhaar card and its History

আধার কার্ড লাগু করার কারণ ও তার ইতিহাস । Reasons for applying Aadhaar card and its history
আধার কার্ড লাগু করার কারণ ও তার ইতিহাস । Reasons for applying Aadhaar card and its history


১. আধারের ইতিহাস : 

'আধার' এক বিরাট স্বপ্নের নাম — ২০০৫ সালের পর থেকেই ভারত সরকার বহুমুখী জাতীয় পরিচয় পত্র (Multipurpose national identity card / MNIC) প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের উপযােগিতা অনুভব করতে থাকে। 


প্রথমবারের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী বহুদিন আগেই এই ধরনের পরিচয় পত্র চালু করার। উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিং এই উদ্যোগকে তরান্বিত করার জন্য ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্ল্যানিং কমিশনের তত্ত্বাবধানে The Unique Identification Authority of India (UIDAI) গ্রহণ করেন। নতুন দিল্লীতে এই জাতীয় সংস্থাটির। প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। 


প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও পরবর্তীকালে ২০১০ সালে বার্ষিক বাজেটে এই ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩০০০ কোটি টাকা করা হয়। ২০০৯ সালের জুন মাসে ইনফোসিসের উপর চেয়ারম্যান নন্দন নিলেকানি সর্বপ্রথম UIDAI-র চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ঝাড়খণ্ড সরকারের নিযুক্ত আই.এ.এস অফিসার রামসেবক শর্মা ছিলেন এই অথরিটির ডিরেক্টর জেনারেল এবং মিশন ডিরেক্টর (Mission Director)।


UIDAI কর্তৃক সর্বপ্রথম ‘আধার’ কর্মসূচীর সূচনা হয় ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, মহারাষ্ট্রের ননদুর্বার, তেমনভলি, শাহাদার প্রভৃতি উপজাতি গ্রামে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিং এবং UPA চেয়ারপার্সন শ্রীমতী সােনিয়া গান্ধি এই কর্মসূচীর সূচনা করেন। তেমভলি গ্রামের রঞ্জনা সােনাওয়ানে নামক এক ভারতীয় নাগরিকের হাত ধরে প্রথম ‘আধার অন্তর্ভুক্তিকরনের কাজ শুরু হয়। ২০১১ সালের রিপাের্ট অনুযায়ী ভারতে ১২টি রাজ্যে এই কর্মসূচীর কাজ জারি রয়েছে। ৬টি আঞ্চলিক অফিস চণ্ডীগড়, লক্ষৌ, রাঁচি, গৌহাটি, মুম্বই ও হায়দ্রাবাদে অবস্থিত।

২. 'আধার'-র লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য : 

আধার কার্ডের অদ্বিতীয় নাম্বার সিস্টেমের মতই এর উদ্দেশ্যে বহুমাত্রিক :-
  • পরিষ্কার, সরল ও সচিত্র পরিচয় পত্র। 
  • গ্রামীন অঞ্চলের প্রান্তিক ও দরিদ্র মানুষদের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাময়তা তৈরী করা। 
  • দরিদ্র ও পেছনের সারির মানুষের ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে। 
  • দারিদ্র্যমোচক  বিভিন্ন কর্মসূচী, যেমন- MGNREGA (একশাে দিনের কাজ), IRDP, ইন্দিরী আবাস যােজনা, জওহর স্বর্ণজয়ন্তী গ্রাম স্বরােজগার যােজনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান। 
  • সরকারি বা বেসরকারি পরিষেবার ক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান।
  • পরিব্রাজনকারী পরিচয়পত্র (Migrating Identification Card) 
  • নিয়ন্ত্রণহীন বিদেশী অনুপ্রবেশবােধ মাধ্যমে আভ্যন্তরীণ সুরক্ষা প্রদান।
  • ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের পরিচয়পত্র চালু রয়েছে। এই অভিন্ন পরিচয়পত্র চালু করা গেলে, অন্যান্য প্রচলিত পরিচয়পত্র, যেমন—ভােটার কার্ড, পাসপাের্ট, লাইসেন্স প্রভৃতিকে এর সাথে সংযুক্তিকরণ সম্ভব হবে এবং দালাল চক্র, ঘুষচক্রগুলি অচিরেই ব্যবসা গােটাবে। 


৩. আধার কার্ডের বৈশিষ্ট্য : 

এককথায় ‘আধার হল UIDAI প্রদত্ত ভারতের সকল অধিবাসীদের জন্য প্রকাশিত ১২ সংখ্যার এক স্বতন্ত্র ও অদ্বিতীয় নম্বর। এই নম্বরের দ্বারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জনসমষ্টিগত ও জৈব সম্বন্ধীয় (ছবি, আঙুলের ছাপ, চোখের কণীনিকা) তথ্যাদি সংরক্ষিত হবে।

  • এটি অদ্বিতীয় নম্বর অর্থাৎ প্রতিটি ব্যক্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট ও আলাদা নম্বর। 
  • প্রত্যেক পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের জন্য এই কার্ড এবং শিশুদের জন্য এই কার্ড এবং শিশুদের জন্যও আলাদা পরিচয় পত্র থাকবে। 
  • এটি প্রত্যেক ব্যক্তির সনাক্তকরণ বা পরিচয় প্রদানে সক্ষম, কিন্তু নাগরিকত্বের কোন প্রমাণ নয় অর্থাৎ কার্ডটি শুধুমাত্র ভারতীয়দের প্রদান করা হবে এমন নয়।
  • আধার থাকা আবশ্যিক নয়—ঐচ্ছিক।
  • প্রত্যেকে একটি করেই ‘আধার’-র অধিকারী হবে, একাধিক নয়। 
  • প্রত্যেক ব্যক্তির সকল তথ্যাদি UDI কর্তৃপক্ষের কাছে গােপনে নথিবদ্ধ ও সংরক্ষিত থাকবে। শুধুমাত্র সঠিক পরিচয় জিজ্ঞাসার উত্তরে ‘হ্যা’ বা ‘না’ উত্তর কর্তৃপক্ষ দিতে বাধ্য থাকবে। 
  • আধার কার্ড অন্যান্য পরিচয়পত্র (পাসপাের্ট, রেশনকার্ড)-র বিকল্প নয়। কিন্তু এই পরিচয়পত্রগুলি চিহ্নিত করনে ব্যবহার করা যাবে এটিকে। 
  • ক্রেডিট কার্ড ও ডেবিট কার্ড উভয় হিসেই ব্যবহৃত হতে পারে। কার্ডটি থাকলে বিপুল পরিমানে ভারতীয় ও বিদেশী মুদ্রা কাছে রাখবার দরকার নেই। 
  • এই কার্ডের মাধ্যমে ইলেকট্রিক বিল, জলের বিল ও অন্যান্য বিলও প্রদান করা যাবে। 


৪. ভ্রাম্যমান শ্রমিক এবং আজীবিকা ব্যুরাে : 


শ্রমিক পরিব্রাজনের বীজ ভারতের দ্বিতীয় পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬-৬১)-র পূর্ববর্তী সময় থেকেই রােপিত। তাই গ্রামাঞ্চলের শ্রমিক যারা মূলত ভ্রাম্যমান ও ছদ্মবেকার (disguised unemployed), তাদের পরিষেবা ও আর্থ-সামাজিক সাহায্য দেওয়ার লক্ষ্যেই 'আজীবিকা ব্যুরাে’ গঠন করা হয়েছে।

২০০৫ সালে গড়ে ওঠা এই স্থানীয় সংগঠন ক্রমশ তারুন্যের দিকে অগ্রসর হয়ে চলেছে। যেসব শ্রমিকদের নিয়ে এই ব্যুরাের কার্যকলাপ তারা মূলত দক্ষিণ রাজস্থানের উদয়পুর, দুঙ্গাপুর ও রাজসামন্দের বিভিন্ন ব্লকের বাসিন্দা। এরা মূলত কাজের সন্ধানে মুম্বাই, আমেদাবাদ, জয়পুরের মত বড় শহরগুলিতে পরিব্রাজন করে থাকে, যাদের বাড়ির মহিলাদের বছরের বেশীরভাগ দিনই অনুভব করতে হয় পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সুরক্ষাজনিত অনুপস্থিতির অভাব। 

শ্রমিক সহায়তা এবং সন্দর্ভ কেন্দ্রের সুবিশাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই ভ্রাম্যমান শ্রমিকদের নথিভুক্তিকরণ, সচিত্র পরিচয়পত্র প্রদান, ভেজা বন্ধির প্রশিক্ষণ, আইনি পরিষেবা ও অন্যান্য আর্থিক সহায়তা করে থাকে এই সংস্থাটি। এককথায় বলা যেতে পারে এই আজীবিকা ব্যুরাে হল ‘আধার' প্রকল্পের একটি পূর্ববর্তী ক্ষুদ্র সংস্করণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.